ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ , ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহফুজকে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত ছিনতাই চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৭-১৩ ২০:১১:৪৮
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহফুজকে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত ছিনতাই চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহফুজকে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত ছিনতাই চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহফুজকে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত ছিনতাই চক্রকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

 

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, খুনি, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, ধর্ষণকারী, পর্ণোগ্রাফি বিস্তারকারী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

 

আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড এ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধ্যায়নরত হাতেম আলী কলেজ এর ছাত্র মোঃ মাহফুজুর রহমান নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তার পায়ে রক্তাক্ত জখম হয় এবং তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর কিছু সময় পর তার নিথর মরদেহ আব্দুল্লাহপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বিআরটির একটি নির্মাণাধীন স্থানে পাওয়া যায়।

 

ছুরিকাঘাতে হত্যাকান্ড ঘটানোর পর দুর্বৃত্তরা অতি দ্রুত পলায়ন করে। উক্ত ঘটনা অনুসন্ধানে কোন ক্লু ছাড়াই র‌্যাবের ছায়া তদন্ত শুরু হয়। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ভিকটিম এর এন্ড্রয়েড সেটটি হত্যাকান্ডের প্রায় ২ ঘন্টা পর সনাক্ত করা যায়। বর্ণিত ঘটনার সূত্র ধরে র‌্যাব-১ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল মোবাইলের গ্রাহককে দ্রুত সময়ে সনাক্ত করে নজরবন্দীতে আনে। মোবাইল এর গ্রাহককে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তিনি জানান যে ভিকটিমের সেটটি টঙ্গীর মাজার বস্তির এক চোরাই মোবাইল ব্যাবসায়ীর কাছ থেকে ৩৫০০/- টাকা মূল্যে ক্রয় করেন।

 

বর্ণিত ঘটনা অনুসন্ধানে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল মোবাইলের গ্রাহককে বিভিন্ন সন্দেহভাজন চোরাই মোবাইল চক্রের ছবি দেখান হয়। গ্রাহক তৎক্ষনাৎ মোবাইল বিক্রেতা রাকিবকে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে র‌্যাব এর অভিযানিক দল তাকে গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গ্রেফতার করে। মোবাইল বিক্রেতা রাকিব একজন প্রাক্তন মাদক ব্যাবসায়ী। তিনি বর্তমানে ছিনতাইকারীদের ব্যাবহার করে কম মূল্যে মোবাইল সংগ্রহ করেন এবং লাভজনক মূল্যে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করেন।

 

একই সাথে ছিনতাইকারীরা তার নিকট হতে সুইচ গিয়ার এবং অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম সংগ্রহ করেন। চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিব এর কাছে ১টি ছিনতাই চক্র সর্বমোট ৩টি মোবাইল সেট বিক্রয় করেন। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিমের বোন জামাই মোঃ জসিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে টঙ্গী পশ্চিম থানার মামলা নং-৭ তারিখ ১১/০৭/২০২৫, ধারা-৩৯৪/৩০২/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।

 

এরই ধারাবাহিকতায় ১২ জুলাই ২০২৫ইং তারিখ বর্ণিত ছিনতাইকারী চক্র সনাক্ত করার জন্য র‌্যাব আবার অভিযান চালায় এবং রাকিবের তথ্য দেয়া ৩জন ছিনতাইকারী ১) মোঃ রাফসান জানি রাহাত (২৮), ২) মোঃ রাশেদুল ইসলাম (২০), ৩) মোঃ কাওছার আহম্মেদ পলাশ (২৩), ৪) রাকিব ইসলাম (২৬)দের টঙ্গীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

 

অভিযানে প্রথমে কাওছার আহম্মেদ পলাশকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত পলাশের তথ্য অনুযায়ী ছুরি ব্যবহারকারী ছিনতাইকারী রাশেদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ছাত্র মাহফুজকে গুরুতর জখমের জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেন এবং তাদের সাথে জড়িত অন্যান্য ছিনতাইকারীর সন্ধান দেন। একই সাথে ছিনতাই এর সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল চালক রাহাতের সন্ধান দেন। চালক রাহাতকেও একইদিনে গ্রেফতার করা হয়। এর মাধ্যমেই ১টি ছিনতাই চক্র সম্পূর্ণ গ্রেফতার হয়।

 

আটককৃত আসামীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, তারা পেশাদার ছিনতাইকারী এবং একই দিনে তারা রাজধানীর হাউজ বিল্ডিং এবং কুর্মিটোলা এলাকায় আরো দুটি মোবাইল ছিনতাই করেন। ক্লুলেস মার্ডারটির ব্যাপারে তারা জানান যে ছিনতাই করার সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেন। একটি চক্রের মধ্যে পলাশ মূলত বিভিন্ন ভিকটিমের ব্যক্তিগত মোবাইল মানিব্যাগ ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী সংগ্রহ করেন।

 

অন্যদিকে সাগর ধারালো অস্ত্র দ্বারা ভিকটিমকে ভয় দেখান এবং ভিকটিম তাদের কথা না শুনলে শরীরের আঘাত করার মাধ্যমে তার নিকট থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করেন। ছিনতাই করার পূর্বে তারা সাধারণত মাদকসেবন করে আসেন এবং চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিবের নিকট হতে বিভিন্ন ধরনের ধারালো অস্ত্র সংগ্রহ করেন।

 

ছিনতাইকারীরা স্বীকার করেন যে দুটি স্থানে তাদের সাথে ভিকটিমের হাতাহাতি হয়, যার কারণে সে দ্রুত তার ধারালো অস্ত্রটি ব্যবহার করেন। ছিনতাই করার পরে তারা ৩টি মোবাইল ঘটনার প্রায় ২ ঘন্টা পর রাকিবের নিকট হস্তান্তর করেন। চোরাই মোবাইল বিক্রেতা রাকিব জানান মোবাইলটি হস্তান্তর করার পরে তিনি পলাশের হাতে রক্ত দেখতে পান যা তিনি ছিনতাই করার পর ধুয়ে ফেলেন।

 

একই সাথে তিনি জানান যে পুরো চক্রটি এক ড্রাম পানি ব্যবহার করে গোপনে নিজেদের পরিষ্কার করে নেয়। রাকিবের দেওয়া তথ্য ছিনতাইকারি পলাশ স্বীকার করলেও তিনি জানান যে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা কাউকে সাধারণত আঘাত করেনি। অন্যদিকে ছুরি ব্যবহারকারী রাশেদ অত্যন্ত চালাকির সাথে ঘটনাটি এড়িয়ে যান এবং উক্ত সময়ে ঘটনাস্থলে তার অনুপস্থিতির কথা বলেন। তাদের প্রদত্ত জবানবন্দির প্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ক্রাইম টাইম এবং তাদের উপস্থিতি যাচাই করা হয়।

 

যাচাইয়ের পরে দেখা যায় যে, হত্যাকান্ড ঘটানোর আগে তারা মোটরসাইকেল ড্রাইভার সহ ১১ঃ৩৭ মিনিট থেকে উক্ত স্থানে উপস্থিত ছিল এবং এরপর মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যেই তারা ঘটনাটি শেষ করে দ্রুত পালিয়ে যায়। সার্বিক জিজ্ঞাসাবাদ করার পর মোবাইল চোর রাকিব একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। ছিনতাই চক্রের ছিনতাইকারীরা তাদের মোবাইলের বিনিময়ে ঐ দিন রাকিবের কাছ থেকে কোন অর্থ গ্রহণ করেননি।

 

তারা মোবাইল বিক্রয় করতে আসার পরে রাকিব তাদেরকে জানান, যে পুলিশ, ছাত্র মাহফুজ হত্যার দায়ে ছিনতাইকারীদের সন্দেহ করছেন। এ কথা শোনার পরে রাশেদ খুব দ্রত ভিকটিমের মোবাইল সেটটি রাকিবকে হস্তান্তর করেন এবং অর্থ আদায় না করে ঐ দিনই আত্মগোপনে থাকেন। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

 

 

 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ